AHS

বৌদ্ধ দর্শন, শাস্ত্র ও পালি ভাষার ইতিহাস (Part – 3)

বৌদ্ধ দর্শন, শাস্ত্র পালি ভাষার ইতিহাস (Part – 3)

মহাযানীদের ভূমিকা:

অন্যদিকে মহাযানীরা মনে করতেন যে, হীনযানীদের নির্বাণ সাধনা বা অস্তিত্বকে অনস্তিত্বে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য শূন্যতার সাধনা করা জিনিসটা সঠিক নয়, এবং সেটার উদ্দেশ্যটাও সত্যি নয়। তাঁদের মত ছিল যে, নির্বাণ লাভ করবার সাধনার থেকে বুদ্ধত্ব লাভ করবার সাধনাটাই বড়। বুদ্ধত্বলাভ বলতে তাঁরা বোধিচিত্তের অধিকারলাভ করাকে বুঝতেন। তাঁদের কাছে সেই বুদ্ধত্বলাভ ছিল — করুণা এবং শূন্যতার একটি সমন্বয়। তাঁরা ভাবতেন যে, হীনযানীদের নিষ্ঠাপূর্ণ আচারপরায়ণতাটা যেমন কোন সঠিক ধর্মসাধনা নয়, তেমনি ব্রাহ্মণদের আচারসর্বস্ব যাগযজ্ঞ মন্ত্রপাঠ বলিদান স্নান তর্পণও মোক্ষলাভ করবার কোন প্রকৃত উপায় নয়। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, ধর্মসাধনাটাকে এই পর্যায়ে রাখলে শেষপর্যন্ত সেটা একটা শুষ্ক আচারপরায়ণতায় পর্যবসিত হয়ে যাবে। সেজন্য সেটাকে ব্যক্তিগত উপলব্ধি সাধনা ও সিদ্ধির বস্তু করে তুলতে হবে। তাই সেখানে কোন গণ্ডীবদ্ধ নৈষ্ঠিকতায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না; — সেখানে মনোময় ব্যক্তিসাপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এবং আচার নৈষ্ঠিকতাকে বর্জন করতে হবে। তাই মহাযানী ধর্মসাধনায় সাধকের নিয়মনিষ্ঠ বস্তুতান্ত্রিক কঠোর আচারপরায়ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর সেই মুক্তির অবকাশ ছিল বলেই মহাযানী সাধনপদ্ধতিতে সমসাময়িক অবৌদ্ধ ধর্মগুলির নানা ধারার অনুপ্রবেশ ঘটবার সুযোগ বেশি করে হয়েছিল। বিশেষ করে খৃষ্টীয় অষ্টম-নবম শতকের বঙ্গদেশে মহাযানপন্থী বৌদ্ধধর্মে নানারকমের তান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার ছোঁওয়া লেগেছিল। সেই কারণেই চর্যাপদের সমসাময়িক কালে বা সেটার সামান্য কিছু আগে বাংলার বৌদ্ধধর্মে গুহ্য সাধনতত্ত্ব পূজা আচার ও নীতিপদ্ধতির প্রয়োগ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। সেই যে তান্ত্রিক আচার-আচরণের এবং সেটার সঙ্গে মন্ত্র তন্ত্র গুহ্য সাধনতত্ত্বের অনুপ্রবেশ মহাযানী সাধনপন্থায় ঘটেছিল, সেসবের পিছনে একটা গূঢ় সমাজতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে, সেই সময়ে ব্রাহ্মণ্য ধর্মেও তান্ত্রিকতা, রহস্যময় গূঢ়ার্থক গুহ্যমন্ত্র যন্ত্রধারণী বীজ মণ্ডল — এসমস্ত অনুপ্রবিষ্ট হয়েছিল। এর কারণ হল যে, ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধধর্ম — উভয়েই তখন নিজেদের প্রভাবের সীমাকে একটু বাড়িয়ে আদিম কৌম সমাজের ওপরে নিজেদের সর্বাত্মক প্রতিষ্ঠা বিস্তার করতে চেয়েছিল। সেকালে দুর্গম পর্বতের গুহায় এবং গহন অরণ্যেক অন্তরালে যেসব আদিম অধিবাসীরা বহু যুগ ধরে ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাবের বাইরে থেকে নিজেদের স্বকীয় সহজ স্বচ্ছ জীবনযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পেরেছিলেন, তাঁদের নিজস্ব পূজাপদ্ধতি ধর্মাচরণ এবং আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াক্রর্মে ভূতপ্রেত ডাকিনী-যোগিনী পিশাচ-মায়া মন্ত্র-যন্ত্র গূঢ়ার্থক অক্ষর — এককথায় অলৌকিক অতিপ্রাকৃত যাদুশক্তির ওপরে বিশ্বাস প্রধান ছিল। হয়ত সেইসব অতিপ্রাকৃত যাদুশক্তিতে বিশ্বাসী আদিম কৌম সমাজকে নিজেদের প্রভাবের মধ্যে আনতে গিয়ে ব্রাহ্মণ এবং বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা সহজ সমাজতাত্ত্বিক যুক্তিতে আদিম কৌম সমাজের যাদুশক্তিতে বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। আর সেই কারণেই বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মে মন্ত্র তন্ত্রের অনুপ্রবেশ হয়ে থাকতে পারে। এরকম কথাও প্রচলিত রয়েছে যে, বৌদ্ধ আচার্য অসঙ্গ নাকি সেইসব জিনিসকে মহাযানী দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার এরকমও হতে পারে যে, — সেইসব আদিম কৌম সমাজের যাঁরা তখন স্বেচ্ছায় বৌদ্ধ বা ব্রাহ্মণ্যধর্মে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁদের নিজেদের জপ তপ ধ্যান ধারণা আচার অনুষ্ঠান ক্রিয়াপদ্ধতি ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই নতুন ধর্মে যোগ দিয়েছিলেন। পরে হয়ত ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা সেইসব আদিম কৌম সমাজের ধর্মবিশ্বাসগুলিকে সংস্কার ও শোধন করে নিয়েছিলেন। উক্ত সমস্ত কারণের মধ্যে কোনটা তখন অধিকতরভাবে সম্ভব হয়েছিল, সেকথা এখন আর সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই ধরণের একটা সমন্বয় যে পূর্ব ভারতের বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যধর্মে খৃষ্টীয় অষ্টম-নবম শতক বা সেই সময়ের কিছু আগে থেকে হয়েছিল — সেকথা জোর দিয়ে বলা চলে। শুধুমাত্র কি করে সেই তান্ত্রিক বিবর্তন ঘটেছিল — সেটার কোন সঠিক কারণ ইতিহাসে অন্ততঃ পাওয়া যায় না।বৌদ্ধ দর্শন, শাস্ত্র ও পালি ভাষার ইতিহাস (Part - 3)

তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা চলে যে, মহাযানী সাধনপদ্ধতিতে আদিম কৌমসমাজের বা এখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত অন্য কোনও সূত্র থেকে আগত সেই মন্ত্র-তন্ত্র এবং নতুন ধ্যানকল্পনার প্রতিষ্ঠার ফলেই মহাযানী ধর্মাচরণের মধ্যে নানাধরণের বিবর্তনের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিবর্তনের প্রথম ধাপ ছিল মন্ত্রযা, — যেটার মূল প্রেরণা ছিল মন্ত্র এবং সেই মন্ত্র থেকে ধারণী ও বীজ। যে বৌদ্ধাচার্যরা সেই নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন, তাঁদের মন্ত্রযানী সম্প্রদায় বলে অভিহিত করা হয়েছিল। সেই সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধরা প্রাচীন মহাযানী ধারণার মূল আশ্রয় — শূন্যবাদ, বিজ্ঞানবাদ, যোগাচার, মধ্যমিকবাদ — ইত্যাদি কিছুই বুঝতেন না, কিংবা বুঝলেও সেসব নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামাতেন না। হয়ত নতুনতর ধারণাটিই তাঁদের কাছে অধিকতর সহজ ও সত্যি বলে মনে হয়েছিল।

বৌদ্ধ ধর্মে নতুন শাখার সূচনা:

এভাবেই বৌদ্ধধর্মের আরেকটি শাখার সৃষ্টি হয়েছিল, যেটার নাম ছিল — বজ্রযান। বজ্রযানীরা মনে করতেন যে, নির্বাণ লাভ করবার পরে তিনটি অবস্থা রয়েছে, যথা — শূন্য, বিজ্ঞান ও মহাসুখ। শূন্যতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য নাগার্জুন বলেছিলেন যে, মানুষের সমস্ত দুঃখ, কর্ম, কর্মফল, চারদিকের সংসার এবং সংসারের সমস্ত মোহ আকর্ষণ ও আকাঙ্ক্ষা — সবই হল শূন্য। এই শূন্যতার পরম জ্ঞানই হচ্ছে নির্বাণ। এই যে শূন্যতার পরমজ্ঞান, সেটাকে — নিরাত্মা — বলা হয়েছিল, এবং তিনি একজন দেবীরূপে কল্পিতা হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম হয়েছিল — নৈরাত্মা দেবী। সাধকের বোধিচিত্ত যখন নিরাত্মায় বিলীন হয়ে যায় তখন মহাসুখ জন্ম নেয়। নরনারীর দৈহিক মিলনের ফলে যে পরম আনন্দ, যে এককেন্দ্রিক উপলব্ধিময় ধ্যান — সেটাকেই বজ্রযানীরা বোধিচিত্ত বলে থাকেন। সাধক যদি তাঁর নিজের ইন্দ্রিয়শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে দমন করতে পারেন, তাহলে সেই বোধিচিত্ত বজ্রের মত কঠিন এবং দৃঢ় হবে। বোধিচিত্ত সেই বজ্রভাব পেলে তবেই বোধিজ্ঞানের উন্মেষ সম্ভব। চঞ্চল চিত্তকে সেই বজ্রভাবে নিয়ে যাওয়ার যে সাধনা — সেটাকেই বজ্রযান বলা হয়। বজ্রযানে যেমন নরনারীর দেহমিলনের কথা বলা হয়েছে, তেমনি আবার ইন্দ্রিয়শক্তিকে দমন করবার কথাও বলা হয়েছে; — দুটো বিপরীত মতের জন্য জিনিসটা তাই একটু গোলমেলে বলে বোধ হতে পারে। সেই সংশয় দূর করবার জন্য সিদ্ধাচার্যরা বলেছিলেন যে, ইন্দ্রিয়কে দমন করতে গেলে আগে সেটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে; এবং মৈথুন হল সেই জাগরণের উপায়। মৈথুনজাত আনন্দ বা সাধকের বোধিচিত্তকে মন্ত্রশক্তির সাহায্যে স্থায়ী করা যাবে, আর সেই মন্ত্র ও সাধনার শক্তিতে মৈথুনজাত আনন্দ থেকে বিভিন্ন দেবদেবীরা জন্ম নেবেন, এবং সাধকের ধ্যানচক্ষুর সামনে তাঁরা এক একটি মণ্ডলে অধিষ্ঠিত হবেন। সাধক যদি সেই মণ্ডলগুলির সম্যক ধ্যান করতে থাকেন, তবেই তাঁর বোধিচিত্ত স্থায়ী দৃঢ় এবং কঠিন হয়ে ধীরে ধীরে বোধিজ্ঞানে বিলীন হয়ে যাবে। যখন সাধকের সমস্ত ইন্দ্রিয় দমিত এবং তাঁর সমস্ত কামনাবাসনা অন্তর্হিত হয়ে যাবে, — তখন বলা হবে যে, সাধক পরমজ্ঞান লাভ করতে পেরেছেন। বলা বাহুল্য যে, এই সাধনপদ্ধতি অত্যন্ত গুহ্য ও কঠিন। আর সেটার থেকেও কঠিন হল — যে ভাষায় এবং যে শব্দে এই সাধনপদ্ধতিকে বোঝানো হয়ে থাকে — সেটা। প্রকৃত গুরু ছাড়া অন্য কেউ যেমন এই সাধনপদ্ধতিকে বোঝাতে পারেন না, তেমনি আবার গুরুর কাছে দীক্ষা না পেলে কোন শিষ্যের পক্ষেই এই সাধন পদ্ধতি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। যেহেতু গুরু এই সাধনপদ্ধতি বুঝিয়ে না দিলে কেউ সেটাকে অনুসরণ করতে পারেন না, — তাই বজ্রযানে গুরু ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। গুরুকৃপা না থাকলে সেখানে সাধকের পক্ষে সিদ্ধিলাভ করা অসম্ভব।

বৌদ্ধ ধর্মে মন্ত্র দেবদেবীর আরাধনা:

বজ্রযানে মন্ত্র, গুরু, দেবদেবী এবং তাঁদের ধ্যান রয়েছে। এই সাধনারই বিবর্তিত সূক্ষ্মতর স্তরের নাম হল — সহজযান। বজ্রযানে মন্ত্রের মূর্তিরূপের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায়, সুতরাং এই যানের দেবায়তনও প্রশস্ত। মন্ত্র, মুদ্রা, পূজা, আচার ও অনুষ্ঠান দিয়ে বজ্রযানের সাধনমার্গ পরিকীর্ণ। কিন্তু সহজযানে যেমন দেবদেবীর কোন স্বীকৃতি নেই, তেমনি মন্ত্র-মুদ্রা-পূজা-আচার ও অনুষ্ঠানেরও কোন স্বীকৃতি নেই। সহজযানীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন যে — মানুষ কাঠ, মাটি বা পাথরের তৈরী দেবদেবীর কাছে প্রণত হচ্ছে কেন? তাঁদের কাছে বাহ্যানুষ্ঠানের কোন মূল্যই ছিল না। ব্রাহ্মণদের আচারসর্বস্বতা তাঁদের কাছে যেমন উপহাসের বস্তু ছিল, তেমনি যেসব বৌদ্ধরা মন্ত্রজপ, পূজার্চনা, কৃচ্ছসাধন, প্রব্রজ্যা ইত্যাদি করতেন — তাঁদেরও তাঁরা তামাশা ও নিন্দা করতে ছাড়েননি। দোহাকোষের অনেকগুলি দোহা থেকে সহজযানী সিদ্ধাচার্যদের ধ্যানধারণা ও মতবাদ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যায়। যেমন —

“কিন্তোহো দীবে কিন্তোহো নিবেজ্জ

কিন্তোহো কিজ্জই মন্তই সেব্ব।

কিন্তোহো তিখ তপোবন জাই

মোক্স কি লবভই পানি হ্নাই॥”

এর বাংলা অর্থ — কী হবে তোর ওই  প্রদীপে, কী হবে তোর ওই  নৈবেদ্যে, কী হবেই বা তোর মন্ত্রের সেবায়, কী হবে তোর তীর্থে এবং তপোবনে গিয়ে! জলে স্নান করলেই কি মোক্ষলাভ করা সবভব?

অথবা —

“এস জপহোমে মণ্ডল কম্মে

অনুদিন আচ্ছসি বাহিউ-ধম্মে।

তো বিণু তরুণী নিরন্তর ণেহে

বোধি কি লবভই প্রণ বি দেহে॥”

অর্থাৎ — এই জপ হোম মণ্ডল কর্ম নিয়ে সর্বদা বাহ্য ধর্মে লিপ্ত আছিস! তোর নিরন্তর স্নেহ ছাড়া, ওহে তরুণি, এই দেহে বোধিলাভ কি করে সম্ভব!

সহজযানীদের দৃষ্টিভঙ্গি:

সহজযানীরা বলেছিলেন যে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, — বোধি বা পরমজ্ঞান লাভ করবার সংবাদ স্বয়ং বুদ্ধদেবও জানতেন না — “বুদ্ধোহপি ণ তথা বেত্তি যথায়মিতরো নরঃ।” ঐতিহাসিক বা লৌকিক বুদ্ধের স্থানই বা কোথায়! সবাই বুদ্ধত্ব লাভ করবার জন্যে অধিকারী, এবং দেহের মধ্যেই এই বুদ্ধত্বের অধিষ্ঠান থাকে — “দেহাস্থিতং বুদ্ধত্বং; দেহহি বুদ্ধ বসন্তি ণ জানই।” সহজিয়াদের মতে শূন্যতা অর্থ হল প্রকৃতি আর করুণার অর্থ হল পুরুষ। এই শূন্যতা ও করুণা — অর্থাৎ, নর ও নারীর মিলনের ফলে বোধিচিত্তের যে পরমানন্দময় অবস্থার সৃষ্টি হয়, সেটাই হচ্ছে — মহাসুখ। এই মহাসুখই হচ্ছে ধ্রুবসত্যি; এই ধ্রুবসত্যির উপলব্ধি ঘটলে মানুষের সমস্ত ইন্দ্রিয়কামনা নষ্ট হয়ে যায়, এবং সংসারের ভালো-মন্দের ধ্যানধারণা, আত্ম-পর ভেদবুদ্ধি — ইত্যাদি সমস্ত সংস্কার বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই অবস্থাই হচ্ছে ‘সহজ’ অবস্থা। এর জন্য কোন মূর্তি-তন্ত্র-মন্ত্র লাগেনা; জপ তপ ধ্যান নৈবেদ্য দীপ ধূপ — সমস্তই এক্ষেত্রে নিরর্থক; এবং সমস্ত শাস্ত্রীয় আচার ও শাস্ত্রজ্ঞান অপ্রয়োজনীয় ও অবান্তর। সহজ সাধকেরা — শূন্যতাবাদ, বিজ্ঞানবাদ, মধ্যমিকবাদ — সমস্ত কিছুকে বর্জন করে শুধুমাত্র — দেহবাদ বা কায়াসাধন–কে গ্রহণ করেছিলেন।

(পরবর্তী ভাগে Part – 4)

Leave a Comment